সাহিত্য ও কবিতা

বিশ্বজিৎ মানিকের দু,টি কবিতা || খৌর শিল্পীর আর্তি ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য

বিশ্বজিৎ মানিকের দু,টি কবিতা || খৌর শিল্পীর আর্তি ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য



খৌর শিল্পীর আর্তি


বাবার দেওয়া নামটি হলো – বলহরি শীল
কাজ কর্ম করেই আমার – খুশি হতো দিল।

খৌর শিল্পের হলো বুঝি – মহা সর্বনাশ
করোনার ছোবলে এখন – হয়েছি বিনাশ।

দুই মাস হয়ে গেছে – বন্ধ আমার দোকান
কে বা কারা,দেবে বলো – খাদ্যের জোগান?

টাকা পয়সা যা ছিলো তা – হয়ে গেছে শেষ
বেঁচে থাকা কঠিন বিষয় – হয়ে যাবো নিঃশেষ।

মরণ বুঝি কাছেই এলো – যাচ্ছে না তো বাঁচা
চেয়ে দেখি মাথা ‘ চাছে ‘ – পাশের বাড়ির চাচা।

বংশ পরম্পরায় আমি – হচ্ছি জাতে নাপিত
চুল দাড়ি কেটেই আমরা – জীবন করি যাপিত।

ভদ্রলোকের গিন্নি বুঝি – এখন কাটে চুল!
তা হলে কি ধ্বংস হবে – জাতের নাপিত কূল?

আমরা যারা ছিলাম আগে – বন্ধান করা লোক
এসব দেখে হতাশ হয়ে – পাচ্ছি ভীষণ শোক।

হাট বাজারে দেখছি শুধু – ন্যাড়া মাথা বেল
ন্যাড়া মাথা হলে বুঝি – লাগেনা আর তেল।

তেলের খবর জানেন নাকি – হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
মাথা মালিশ করতে এখন – লাগছে না আর মিস্ত্রি।

কতো লোক এলো গেলো – আমার দোকান ঘরে
করোনার কারণে তারা – থাকে এখন দুরে।

সামাজিক দুরত্বের জন্য – লক ডাউন হলো
শপিং মল কি কারণে – এখন খুলে দিল?
দোকানে দোকানে দেখি – মানুষের ভীড়
খৌর শিল্পীর দোকান গুলো – বন্ধ  আছে স্থির।

পারদর্শী ছিলাম আমি – আমার নিজের কাজে
করোনার কারণে এখন – মৃত্যু ঘণ্টা বাজে!

আমাদেরে দেখা এখন – জরুরি দরকার
ত্রাণ কিন্তু দিতেই আছে – সদাশয় সরকার।

দ্বায়িত্বে আছেন যারা – উপযুক্ত পদে
আমাদেরে দেখে যান – এ মহা বিপদে।

আক্ষেপ করেই বলি – শোন মোর কথা
নিচে আছে দু’টি লাইন – লিখা আছে যেথা।

ত্রাণ বৈষম্য করবে না রে – ওরে ও ভাই দাতা
উপর থেকে দেখতে পাচ্ছেন – এ জগতের ত্রাতা।

২০/০৫/২০২০ খ্রিস্টাব্দ ।

নৈসর্গিক সৌন্দর্য

ঈশান কর সড়কের পাশে – খোকাদের পুকুর
পুকুরের চারপাশের – দৃশ্য খুব মধুর।

সড়কের পাশে আছে – পুকুরের ঘাট
ঘাটের দক্ষিণ পাশে – ফসলের মাঠ।

পুকুরের পারে, আছে তার – কতো কতো গাছ
যেমনটি আছে জলে – রকমারি মাছ।

রাস্তার পাশে তার – ফুলের বাগান
ফুল ফোটে গাছে দেয় – শুভেচ্ছা জানান।

গুল্মে আর বৃক্ষ লতায় – কতো জাতের ফুল
তমাল গাছ আছে এক – গাছেদের মূল।

শতবর্ষী তমাল গাছ – ছায়া দেয় ঘাটে
পথিকেরা বিশ্রাম নেয় – যায় যখন হাটে।

এক সময় তমাল তলে’ই – হতো সব বিচার
এখন আর সেই দিন – নেই কিন্তু আর।

গাছ এখন মৃতপ্রায় – বয়সের ভারে
পর গাছায় ফুল ফোটে – গাছের উপরে।

কদম ফুটেছে কতো – গাছেদের ডালে
ডাল গুলো দোলা দেয় – হাওয়ার তালে।

কৃষ্ণচূড়া ফুল আছে – একাধিক গাছে
ফুলের সৌন্দর্য দেখে – মনটাও নাচে।

আরও এক ফুল ফোটে – মাধবীলতা
ফুলের আধিক্যে তার – লুপ্ত হয় পাতা।

গুলাচি গাছে ফুল – হাজারে হাজার
মনে হয় যেন এক – ফুলের বাজার।

বক ফুলের গাছ আছে – দেওয়ালের ভিতর
ফুটে আছে, গাছে ফুল – কতো যে সুন্দর।

জবা,টগর, বেলী আর – অলকানন্দা ফুল
পূজারী’রা তুলে নিতে – করে না তো ভুল।

দেওয়ালের পাশে তার – ফল গাছের সারি
অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যে – ভরে আছে বাড়ি।

খোকাবাবু দুঃখ পায় – হাতে পারা হলে
আপত্তি থাকে না তার – কুড়িয়ে তা নিলে।

গাছগুলো লাগানো ছিল – খোকার নিজের হাতে
শতবর্ষী তমাল গাছ – বাদ পরে তাতে।

আরও একটি ফুল গাছ – আগেকার দিনের
গুলাচি যিনি লাগিয়েছিলেন – অতীত স্মরণের।

খোকাবাবু বাড়িতে – থাকেনা এখন
পদায়ন আন্তঃজেলায় – চাকরির কারণ।

পাড়ার ছেলেদেরে বলি – দেখে রেখো এ-সব
উপভোগ করবে তোমরা – ইহাদের সৌরভ।

১৯/০৫/২০২০ খ্রিস্টাব্দ।


সংবাদটি শেয়ার করুন