ফিচার্ড লেখালেখি

অবলাচরণ – ২০ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার

অবলাচরণ২০ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার

পূর্ব প্রকাশের পর….

অবলা কিছুতেই দুই চোখের পাতা এক করিতে পারিল না। মহিমের প্রতি তাহার সকল অভিমান এক মুহূর্তে ঝরিয়া যাইয়া তাহার মনোজগৎ জুড়িয়া ভাসিয়া উঠিল তাহার বেদনার্ত মুখখানি।  মহিমের ঘরে তাহার উত্তরাধিকারী আসিয়াছে তাহা সে লোক মারফৎ শুনিতে পারিয়াছে। সে প্রত্যাশা করিয়াছিল তাহার ছেলে সেই সুবাদে তাহাদের মাঝে তিক্ত সম্পর্কের ইতি টানিয়া তাহাকে একখানা পত্র লিখিবে; সাথে থাকিবে নবজাত দেব-শিশুর হাস্যোজ্জ্বল একখানি ছবি। অবলা বার বার সেই ছবির পানে তাকাইয়া, ছবির গায়ে হাত রাখিয়া  শিশুর  ছোট্ট হাতখানি তাহার হাতের মাঝে রাখিয়া কতকিছু বলিয়া যাইবে।

সে যদি জানিত মহিম বিদেশ হইতে ফোন করিয়া কালীচরণের কাছে তাহার সকল খবর রাখে,  তাহা হইলে দীর্ঘ দিনের এমন বেদনার ভার তাহাকে টানিয়া লইতে হইত না। আজ যখন কালীচরণ অনেক সাহস করিয়া  তাহার হাতে তুলিয়া দিল সেই চিঠির স্তূপ – অবলা তখন  নিজকে ধরিয়া রাখিতে পারিল না।

অবলা একে একে সেই জমানো চিঠির কিয়দংশ পড়িতেই উন্মুক্ত হইল সেই দেব-শিশুর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ও কি যেন কি বলিতে চায় ! ওর পাশে দাড়াইয়া আছে তাহার শিশুকন্যা, অনন্যা। এই দশ বছরে ও কতো বড় হইয়া গিয়াছে! অবলা তাহার দিকে কপট অভিমান করিয়া বলিয়া উঠিল –  দাদু, তুমি আমায় ক্ষমা করিয়া দিও। আরও কিছু ছবি দেখিতে তাহার মন আঁকুপাঁকু করিয়া উঠিল। কিন্তু না, আর কোন ছবি নাই। হয়তো মহিম বাবার উপর অভিমান করিয়া  আর পাঠায়নি কোন ছবি। অবলা আবারো হাতে তুলিয়া লইল একই ছবি। বিড়বিড় করিয়া স্বগতোক্তি করিল- কাহার অভিশাপে এই দেব-শিশু প্রতিবন্ধী হইয়া জন্ম নিয়াছে? অবলার বিচারীক মন সক্রিয় হইল। তাহার বিচারীক মন কারোকে কাঠগড়ায়  দাড় করিয়া অভিযুক্ত করিতে উদ্যত হইল। প্রথমে সে তাহার নিজ বংশের শিকড়ে যাইয়া খুঁজিতে লাগিল এমন কোন  প্রতিবন্ধীকে। একে একে সেই বংশ-বৃক্ষের শাখায় ঝুলিয়া থাকা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক সহ আরও অনেক পূর্বজকে সে দেখিতে পাইল। তাহার মনের শঙ্কা কাটিয়া গেল। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো সে আত্মতৃপ্ত হইয়া বংশ কুষ্ঠির পাতা উল্টাইয়া ফিরিয়া গেল সৌদামনির শিকড়ে – সেখানেও কারোকে দেখিতে না পাইয়া তাহার চোখ পড়িল তাহার পুত্রবধূ উপর। মনে মনে ভাবিল নিশ্চয়ই তাহার পুত্রবধূর বংশে কোন পাগল, প্রতিবন্ধী বা নিরেট বোকা জাতীয় কেহ আছে – তাহা না হইলে তাহাদের বংশে এমন সন্তান আসিবে কেন?

তাহার যুক্তিবাদী মন তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া প্রশ্ন করিল – অবলা এই তোমার জ্ঞানার্জন? তুমি সাধনা করিয়াছ – তুমি বিচারীক হইবে না, কিন্তু আজ যেই নিজের অহমে আঘাত লাগিল, তুমি তৎক্ষণাৎ বিচারী হইয়া গেলে? এই জীব জগতের, এই প্রকৃতির রহস্যের কতটুকু তুমি জান?  কলেজের বই ঘাঁটিয়া তুমি যে বংশগতির তত্ব মুখস্থ করিয়াছিলে – তাহার কি কিছুই মনে নাই? স্মৃতির মাঝে ডুব দিতেই চোখে পড়িল – মহামতি মেন্ডেল –  যার হাত দিয়াই উন্মুক্ত হইয়াছিল বংশগতির অজানা তথ্যের ভাণ্ডার। তাহার তত্ব অধ্যয়ন করিতে যাইয়া সে জানিতে পারিয়াছে কেমন করিয়া পিতা-মাতার জীনগত বৈশিষ্ট্য   বংশানুক্রমে প্রবাহিত হয় সন্তান সন্ততিতে।

জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান জ্ঞানী হইবে – একথা অনেকাংশে সত্য হিলেও দ্বিতীয় প্রজন্মে ২৫%  ক্ষত্রে এর উলটটাও ঘটিতে পারে। প্রকৃতি  আসলে প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য কতোটুকই বা আলর মুখ দেখিয়াছে?

চলবে….

।। সুশীল কুমার পোদ্দার , ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।


এসএস/সিএ

 


অবলাচরণ – ১ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ২ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৩ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৪ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৫ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৬ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৭ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৮ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ৯ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১০ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১১ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১২ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৩ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৪ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৫ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৬ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১7 ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৮ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার
অবলাচরণ – ১৯ ।। সুশীল কুমার পোদ্দার

 

সংবাদটি শেয়ার করুন